Runner Protidin

সত্য প্রকাশে অবিচল

চাটমোহর হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুলও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

1 min read



কালাম আজাদ : পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল হোসেন বাচ্চু(৪৮) ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার লাকীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেছেন পাবনা দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত কাযালয়। চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যকর পরিবেশ ও গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।

রোববার (১২ মে) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনার উপ-সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকসী বাদি হয়ে এ মামলা দু’টি দায়ের করেন। দুদক পাবনা কার্যালয়েই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার উপ-পরিচালক খায়রুল হক মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বাচ্চু চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনর ছেলে। বর্তমানে চাটমোহর পৌর সদরের ৬ নং ওয়ার্ডে বসবাস করেন। তার স্ত্রীর নাম কামরুন্নাহার লাকী ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ায় ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই মকবুল হোসেন বাচ্চু কে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেয় দুদক। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনা বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি।

যেখানে মকবুল হোসেন বাচ্চু তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪২ হাজার ২৮৯ টাকা মূল্যের সম্পদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৬ টাকা মূল্যের সম্পদ পায় দুদক। এতে দেখা যায় মকবুল হোসেন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৭ টাকা মূল্যের সম্পদ গোপন করেছেন।

আর অনুসন্ধানে তার মোট সম্পদের নীট মূল্য পাওয়া যায় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ২২৩ টাকা। তার বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৮ টাকা। সে হিসেবে তিনি ১ কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার ৫০৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।

অন্যদিকে, একই তারিখে মকবুল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার লাকীকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। তিনওে তার স্বামীর সাথে একই তারিখে একই কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

তার সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, লাকী স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ প্রদর্শণ করেছেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী আনুসন্ধানকালে তার নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩ টাকা মূল্যের সম্পদ গোপন করেছেন।

আর অনুসন্ধানকালে দুদক লাকীর নীট মোট সম্পদ পায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৬ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৬ টাকা। এখানে কামরুন্নাহার লাকী অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক তার অনুসন্ধান পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করেছে, কামরুন্নাহার লাকী প্রকৃতপক্ষে একজন গৃহিণী। তার স্বামী মকবুল হোসেন বাচ্চু হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন। কামরুন্নাহার লাকীর নিজস্ব কোন আয় না থাকলেও, তার স্বামী মকবুল হোসেন বাচ্চু ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার নামে আয়কর নথি খুলে বিভিন্ন আয় প্রদর্শন করেছেন এবং উক্ত আয় দ্বারা সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই মামলায় মকবুলকে দুই নাম্বার আসামী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, দুদক পাবনা কার্যালয়ে মামলা ২টি দায়ের হয়েছে। দুদকই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে তদন্ত করবে। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।

চেয়ারম্যান মকবুলের সম্পদের জন্য মামলার বিষয়ে তার এলাকার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে এখন ধনী হওয়ার একমাত্র সহজ রাস্তা চেয়ারম্যান মেম্বার হওয়া আর রাজনীতি করা। তাহলে আর কোনো চিন্তা নাই। তবে তারা এর সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানিয়েছেন।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *