Runner Protidin

সত্য প্রকাশে অবিচল

তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে দুগ্ধ খামারিদের উপরে : দুধ উৎপাদন কমেছে ২০ শতাংশ

1 min read

সংবাদদাতা :

পাবনা অঞ্চলে একটানা তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে দুগ্ধ খামারিদের উপরে। চলমান তাপপ্রবাহে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনা খামারিরা। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গরু। খাওয়া কমে গেছে। ফলে দুধ উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি দুধের চাহিদা কমে যাওয়ার দামও কম পাচ্ছে খামারিরা। বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে খামারীদের। মাঠে কাঁচা ঘাস বাঁচিয়ে রাখতে পানি সেচ দিতে হচ্ছে।

পাবনা জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় জেলায় মোট ৬ হাজার ৬৪৩টি খামার রয়েছে। এসব খামারে মোট গরু রয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার। জেলায় মোট দুধ উৎপাদন হয় ৪ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়েও উদ্বিত্ত ২ দশমিক ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

পাবনার সদর, ফরিদপুর, সাঁথিয়া, ভাঙ্গুড়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামার মালিকদের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান তাপপ্রবাহের ফলে দুধ উৎপাদন কমে গেছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদি পশু। গরুর শরীরে জ্বর উঠে যাচ্ছে ১০৮ থেকে ১০৯ ডিগ্রি এবং পেটে গ্যাস হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, পাবনা জেলার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন দুগ্ধ খামারি থেকে উৎপাদিক দুধ বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

খামারীরা জানান, প্রচন্ড গরন থেকে গবাদি পশু রক্ষা করতে দিন-রাত ফ্যান চালাতে হচ্ছে। এছাড়া পাম্প দিয়ে ঠান্ডা পানি তুলে দিনে ৩ থেকে ৪ বার গরু গোসল করাতে হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ।

পাবনার বেড়া উপজেলার নতুনভারেঙ্গা গ্রামের খামারী শফিউর রিমন জানান, Ôগরমে গবাদি পশুর খাওয়া কমে গেছে। গরুর হজম কম হচ্ছে। গরমের কারণে বেশিমাত্রায় হাফাচ্ছে। গরমে দুধ উৎপাদন কমে গেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এছাড়াও গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। গরমে দুধের চাহিদা কমে যাওয়ায় দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা লিটার দরে। স্বাভাবিক সময়ে যখন ৪ থেকে ৫ ঘন্টা দুধ রেখে দেওয়া যেত। এখন সেখানে ৩ ঘন্টা পড়েই দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।Õ

সাঁথিয়া উপজেলার বৃহস্পতিপুর গ্রামের খামারী আব্দুস সামাদ মৃধা জানান, Ôদুই বেলা দিয়ে আমার গরুর দুধ উৎপাদন হতো সাড়ে ১০ মন। তীব্র তাপের কারণে দুধ উৎপাদর হচ্ছে ৯ মন। গরমের কারনে গরুর খাওয়া কমে গেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সারা দিন-রাত ফ্যান চালাতে হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে খরচ বেড়ে গেছে। গরমের হাত থেকে গরু সুস্থ রাখতে আমরা সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছি।Õ

সাঁথিয়া উপজেলার নাড়িয়া গদাই গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী আফসার আলী জানান, Ôপ্রতিদিন আমি ৭ মন দুধ ক্রয়-বিক্রয় করতান। এখন সেখানে সাড়ে ৫ মন দুধ পাচ্ছি।Õ 

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বাসিন্দা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, Ôগরমের সঙ্গে সঙ্গে গরুর পালনের খরচও বেড়েছে। অতিরিক্ত পানি খেতে দিতে হচ্ছে, গোসল করাতে হচ্ছে দিনে ৩ থেকে ৪ টার। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শ্রমিক লাগছে।Õ

সাইফুলের খামারে ৬০টি গরু রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, Ôগরু পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ছয় থেকে সাতজন রাখাল কাজ করছেন। এছাড়া গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে অনেক।Õ

তিনি বলেন, Ôপ্রতি বস্তা গমের ভুষি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সব মিলিয়ে সপ্তাহে প্রতিটি গরুর পেছনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে।Õ

পাবনা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, Ôগরমে স্বাভাবিক ভাবেই গবাদি পশুর খাওয়া কমে যায়। ফলে দুধ উৎপাদন কিছুটা কমে যায়।Õ

তাপপ্রবাহের মধ্যে গবাদি পশুর বাড়তি যতœ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, Ôখামারের ঘরগুলো ঠান্ডা রাখাতে হবে। কাঁচ ঘাস খাওয়াতে হবে এবং দিনে ২-৩ বার গোসল করাতে হবে। এছাড়া গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত পশু চিৎিসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে’

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *